বছরের প্রতিটি দিনই ইবাদাতের। জান্নাত লাভের। মুমিন ব্যক্তি সবসময় জান্নাতি সামান সমৃদ্ধ করার সুযোগ খোঁজে। সবসময় চায় জান্নাতি পথে একটু এগিয়ে থাকতে। ইবাদত যখনই করা হোক আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং এর বিনিময়ে অফুরন্ত ছাওয়াব ও পূণ্য দান করেন। তবে কিছু সময় এমন আছে যে সময়গুলোতে বিভিন্ন কারণে ইবাদতের মান অনেক বেড়ে যায়। ছাওয়াবও হাছিল করা যায় অনেক বেশি।
ইবাদতের মাঝে অন্যতম হলো রোযা। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের সবচে উত্তম মাধ্যম হলো রোযা। দুই ঈদ ও আইয়্যামে তাশরীকের তিনদিন ব্যতিরেকে বছরের অন্য সবদিনেই রোযা রাখা যায়। রমযানের রোযা, জিলহজ্ব মাসের প্রথম নয়দিনের রোযা, আইয়্যামে বীযের রোযা এবং প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। ইনশাআল্লাহ এই প্রবন্ধে আমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযা সম্পর্কে সামান্য জানার চেষ্টা করবো।
সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার ফযীলতঃ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। তাই এই দুই দিন রোযা রাখা সুন্নাত। এই দুই দিনের রোযা কেন উত্তম? হাদীস শরীফে কয়েকটি কারণও বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু কাতাদা আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিলেন, এই দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনেই আমার উপর ওহী অবতরণ শুরু হয়েছে। (তাই শুকরিয়া স্বরুপ এইদিনে রোযা রাখি।)
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৮০৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৫৫০
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের সমস্ত আমল (আল্লাহ তাআলার নিকট) পেশ করা হয়। এজন্য আমি পছন্দ করি আমার আমলনামা রোযা রাখা অবস্থায় পেশ করা হোক।
জামে তিরমিযি, হাদীস নং-৭৪৭
রাবিআ ইবনে গায রহ. হযরত আয়েশা রাযি. কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি উত্তরে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার ব্যাপারে খুবই মনোযোগী ছিলেন। (অর্থাত সাধারণত ছাড়তেন না)।
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-২৪৯৬
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার গুরুত্ব ও ফযীলত বুঝতে পারলাম।
রোযা রাখার পার্থিব লাভঃ
(১) অন্তরের বিভিন্ন রোগ ও পঙ্কিলতা হতে মুক্তিলাভঃ
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে অন্তরের ওয়াসওয়াসা বিদুরীত করার আমল সম্পর্কে অবহিত করব না? (তা হলো) প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা রাখা৷
(২) নেকি বা পূণ্য বহুগুণে বৃদ্ধিকরণঃ
পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, একটি পূণ্যকর্মের দশগুন প্রতিদান দেয়া হয় ৷ সুতরাং প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন রোযা রাখলে ছাওয়াব ও পূণ্যের ভাণ্ডার বিরাট আকারে সমৃদ্ধ হবে ৷
(৩) কামশক্তি ও যৌনাঙ্গের হেফাজতঃ
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহে অসামর্থ্য যুবকদেরকে রোযা রাখার অসিয়ত করেছেন৷ রোযার মাধ্যমে অনেক গোনাহ থেকে বাঁচা যায়।
(৪) শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখাঃ
মাসের মধ্যবর্তী কালিন রোযা স্থুলতা ও নানা ধরণের শারীরিক রোগমুক্তিতে সহায়তা করে৷
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সহীহ নিয়তে যাবতীয় সুন্নাতগুলো নিজে পালন করে সুন্নাহময় সমাজ গঠণের তাওফীক দান করুন।