Menu

“আইয়্যামু বীয” জান্নাতিদের আমল

‘আইয়্যাম’ আরবি শব্দ, এটি বহুবচন। একবচন হলো ‘ইয়াওম’ অর্থ হলো দিবস, কাল, ও সময় ইত্যাদি। ‘বীয’ বা ‘বীদ’ অর্থ শ্বেত বর্ণ, শুভ্র, উজ্জ্বল, সফেদ, ও সাদা ইত্যাদি। ‘আইয়্যামু বীয’ একসাথে অর্থ হলো উজ্জ্বল ও আলোকিত দিবস সমূহ। প্রত্যেক আরবী মাস বা চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫, তারিখকে হাদীস শরীফে আইয়্যামু বীয হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ফারসী ও উর্দূ ব্যাকরণ অনুপাতে ‘আইয়্যামে বীয, বলা হয়। আমাদের দেশে মূলত এভাবেই ব্যবহার করা হয়। এই দিবসগুলোকে আইয়্যামে বীয বা আলোকিত ‍দিন বলা হয়। কারণ এই দিনগুলোতে চাঁদ সবচে বেশি আলোকিত থাকে।

আইয়্যামে বীযের রোযা
প্রত্যেক চন্দ্র মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত। বিভিন্ন হাদীসে এই তিনদিন রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। তাই আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা বান্দিগণ এই তিনদিনকে জান্নাত লাভের বিশেষ মাধ্যম হিসেবে গনীমত মনে করে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে রোযা রাখেন। এই তিনদিনের রোযাকেই আইয়্যামে বীযের রোযা বলা হয়।

আইয়্যামে বীযের রোযার গুরুত্ব ও ফজিলত
একাধিক হাদীসে এই তিনদিন রোযা রাখার বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি প্রদত্ত হলোঃ

(১) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, “আমার প্রিয় বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, যা আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ছাড়বো না। আর তা হলো প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা তথা আইয়্যামে বীযের রোযা পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির পড়া ছাড়া ঘুমাতে না যাওয়া”। (সহীহ মুসলিম, ৭২১ আবু দাউদ ১৪৩৩, মুসনাদে আহমাদ, ২৬৯৩৫)

(২) হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মাসে (নফল) রোযা পালন করলে (শুক্লপক্ষের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।” (সুনানে তিরমিযী ৭৬১, সুনানে নাসায়ী ২৪২৪)

(৩) হযরত ক্বাতাদাহ ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শুক্লপক্ষের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার জন্য আদেশ করতেন।” (সুনানে আবু দাউদ ২৪৪৯, সুনানে নাসায়ী ২৪৩২)

(৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে থাকাবস্থায় অথবা সফরে থাকাবস্থায়, কখনোই আইয়ামে বীযের রোযা ছাড়তেন না।” (সুনানে নাসায়ী ২৩৪৫)

এছাড়াও আরো একাধিক হাদীসে এই তিনদিন রোযা রাখার প্রতি উতসাহ প্রদান করা হয়েছে।

আইয়্যামে বীযের রোযা রাখার পার্থিব লাভ ও তাৎপর্য
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ কিছু তাৎপর্যের কারণে “আইয়ামে বীয” বা চান্দ্রমাসের মধ্যবর্তী কালিন রোযার (সুন্নাত) বিধান করেছেন।

(১) অন্তরের বিভিন্ন রোগ ও পঙ্কিলতা হতে মুক্তিলাভঃ
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে অন্তরের ওয়াসওয়াসা বিদুরীত করার আমল সম্পর্কে অবহিত করব না? (তা হলো) প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা রাখা৷

(২) নেকি বা পূণ্য বহুগুণে ‍বৃদ্ধিকরণঃ
পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, একটি পূণ্যকর্মের দশগুন প্রতিদান দেয়া হয় ৷ সুতরাং প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা রাখলে সারাবছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে ৷

(৩) কামশক্তি ও যৌনাঙ্গের হেফাজতঃ
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহে অসামর্থ্য যুবকদেরকে রোযা রাখার অসিয়ত করেছেন৷

(৪) শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখাঃ
মাসের মধ্যবর্তী কালিন রোযা স্থুলতা ও নানা ধরণের শারীরিক রোগমুক্তিতে সহায়তা করে৷

রব্বুল আলামিন আমাদেরকে এই জান্নাতি আমল করার তাওফিক দান করেন, আমিন।

© একটি হায়াতুল মুসলিম প্রকাশনা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *