Menu

ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন পালন সম্পর্কে ইসলামী নির্দেশনা

হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম ইসলাম ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ একজন নবী ও রাসূল হিসেবে স্বীকৃত । পবিত্র কুরআনে কারীমে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে মাসীহ, (ত্রাণকর্তা) আব্দুল্লাহ, (আল্লাহ তাআলার বান্দা) নবী ও রাসূল ইত্যাদি গুণে বিশেষায়িত করা হয়েছে । হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট ১৫টি সূরায় ৯৮টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আর খ্রীস্টান সম্প্রদায় ২৫ ডিসেম্বর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের কথিত জন্মদিন পালন করে থাকে। আর এটাই আমাদের মাঝে বড়দিন হিসেবে পরিচিত।

হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসঃ
———————————————–
খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস মতে যিশু খ্রিষ্টের জন্ম হয় অলৌকিকভাবে। খ্রিস্টানদের অধিকাংশই যিশুকে ত্রয়ীর তিন জন ব্যক্তির দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরপুত্রের অবতার রূপে পূজা করেন। খ্রিস্টানদের একটি সংখ্যালঘু অংশ সম্পূর্ণত বা অংশত ত্রয়ীবাদকে অশাস্ত্রীয় বলে প্রত্যাখ্যান করে (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)। যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ ধরে জন্মগ্রহণ করেন এই পৃথিবীর সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষে মানুষে বন্ধনকে আরও সুসংহত করতে। তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ আগমনের তিথি স্মরণ করে তাঁর অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে এই শুভ বড়দিন উৎসব পালন করে থাকে। পুণ্যময় বড়দিন যে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব তা বলা বাহুল্য। তাদের কাছে এই দিনটির ধর্মীয় তাৎপর্য ও গুরুত্ব অসামান্য। আধুনিক বিশ্বে বছরের অন্য যেকোনো দিন ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিকভাবেও এতটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। আর তাই বড়দিন উৎসব নিয়ে বিপুল এই আগ্রহ এখন শুধু মাত্র আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সব ধর্মের বর্ণের মানুষের কাছে তাই এর আবেদন ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী।

যিশুখ্রিষ্টের জন্ম কি ২৫ ডিসেম্বরেই হয়েছিল?
————————————-
পবিত্র বাইবেলে যিশু খ্রিষ্টের যে জন্মকাহিনির বর্ণনা আমরা পাই, সেখানে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো উল্লেখ নেই! তাহলে কীভাবে এই পৃথিবীতে ২৫ ডিসেম্বর হয়ে উঠল বড়দিন উৎসব পালনের দিন? বড়দিন উৎসব উদ্‌যাপনের রহস্য জানতে আমাদের যেতে হবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও বহু বছর আগে, মানবসভ্যতার গোড়ার দিকে। রোম সাম্রাজ্যের শাসনামলে ইউরোপে সব থেকে বড় উৎসব ছিল তাঁদের কৃষি দেবতা ও শনি গ্রহের সম্মানে এক বিশেষ ‘উৎসব’। এই উৎসবটি শীতকালের মাঝামাঝিতে ২৫ ডিসেম্বরের দিকে পালন হতো। ওই সময় রোম সাম্রাজ্যের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকত। সে উৎসবে সবাই ছোট-বড়, ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে যেত কিছুদিনের জন্য। সেই সময় যিশুর অনুসারীরা এই উৎসবকে ‘বিধর্মী উৎসব’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

যিশুর জন্ম দিন সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না বলে তাঁরা তাঁর পুনরুত্থানের দিনের কাছাকাছি সময়কেই তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। তাঁদের কেউ কেউ ৬, ১০ জানুয়ারি আবার কেউ কেউ ১৯, ২০ এপ্রিল আবার কিছু অংশ ২০ মে আবার অনেকেই ১৮ নভেম্বরকে বড়দিন উৎসব হিসেবে পালন করতেন। তাঁর অনুসারীরা এও বিশ্বাস করত ২৫ মার্চেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই যিশুকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করা হয়।

পুরাতন বাইবেল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী পুরোহিতগণ বিশ্বাস এবং প্রচার করতেন যে, “প্রবক্তাগণ সকলেই পূর্ণ বছর বাঁচেন এবং জন্ম দিনেই তাঁদের দেহত্যাগ ঘটে।” যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলতেন, “ঈশ্বর অসম্পূর্ণতা বা ভগ্নাংশ পছন্দ করেন না।” পুরোহিতদের এই বিশ্বাসকে অকাট্য প্রমাণ করতেই, ২৫ মার্চকে ঠিক করা হয় একটি মহান দিন হিসেবে। যে দিনে স্বর্গ-মর্ত্যের স্রষ্টা, রাজাধিরাজ সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর তাঁর মহাদূত গ্যাব্রিয়েলকে কুমারী মরিয়মের কাছে পাঠিয়ে এই সংবাদ দেন যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও অলৌকিক ক্ষমতায় মরিয়ম গর্ভবতী হবেন এবং ঈশ্বরের পুত্রকে গর্ভে ধারণ করবেন। তাঁর নাম রাখা হবে যিশু।”

কুমারী মরিয়ম গর্ভবতী হওয়ার দিন থেকে ৯ মাস হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের দিন। ৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রোমান বর্ষপঞ্জিতে ২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন উৎসব হিসেবে উদ্‌যাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দিনে দিনে বড়দিন উৎসব আরও প্রাণ পেতে শুরু করে। ইউরোপে যিশুর অনুসারীরা নিশি জাগরণ, প্রার্থনার পাশাপাশি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালন করা শুরু করে। বড়দিন উৎসবে তাঁরা ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বা আনন্দ গানের আয়োজন করে। আর এই সংস্কৃতি আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে ‘বড়দিনের কীর্তন’ হিসেবে জায়গা করে নেয়।

গোয়াল ঘরে যিশুর মনোরম ‘জন্মদৃশ্য’ এবং এর ‘ভাস্কর্য’ বা চিত্রকলার ব্যবহার রীতি এখন খুব প্রচলিত। মধ্যযুগে এর প্রচলন করেছিল যিশুর অনুসারীরাই এবং তাঁরা ছিলেন ইউরোপিয়ান। উত্তর ইউরোপের অনুসারীরাই বড়দিন উৎসবের অন্যতম আনন্দ উপাদান ‘ক্রিসমাস ট্রি’র প্রবর্তক। তারাই এই রীতিকে লালন করে এই পর্যায়ে এনেছে এতে সন্দেহ নেই। বর্তমান সময়ে ‘বড়দিন উৎসব’-এর অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণ এবং বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আরও আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এখন বড়দিন আর কেবল ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানোর মধ্যে থেমে নেই। এতে যোগ হয়েছে আলোকসজ্জা, শুভেচ্ছাকার্ড বিনিময়, উপহার দেওয়া-নেওয়া, চকলেট আদান-প্রদান, ঘুরতে যাওয়া, বড়দিনের পিঠা বানান, কেক কাটা ও মিলন ভোজ-সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উচ্চাসনে থাকা প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ সবজায়গায় এর উপস্থিতি ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। সবকিছুতে অতি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে বড়দিন উৎসব এখন অনেকটাই আনুষ্ঠানিক ও আচার সর্বস্ব অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে (সূত্রঃ প্রথম আলো)।

ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন পালন সম্পর্কে ইসলামী নির্দেশনাঃ
———————————————–
ইংরেজী Christmas শব্দটির দুটি অংশ একটি Christ অপরটি Mas. Christ এটি ঈসা আলাইহিস সালাম এর একটি উপাধি, আর Mas অর্থ জন্ম দিন বা জন্মৎসব। তাহলে Christmas এর মাধ্যমে ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মৎসব বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থগত দিক থেকে ক্রীসমাস শব্দটিই একটি শিরকী শব্দ কারণ শব্দটির অর্থ “রবের জন্মদিন বা রবের পুত্রের জন্ম দিন” (নাউযু বিল্লাহি)। মহান আল্লাহ এথেকে পুত পবিত্র।

পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেঃ “তিন কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি“ (সূরা এখলাস, আয়াতঃ ৩)। অতএব একজন মুসলমানের জন্য এই কথাটি মুখে উচ্চারণ করাই হারাম। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “ হযরত আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, আর যে যেই জাতিকে ভালবাসবে তাদের সাথে তার হাশর হবে। (আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৩১, মোসনাদ আহমদ হাদীস নং ৫০৯৩)।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝে আসে যে, কোন মুসলমানের জন্য ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন পালন করা সম্পূর্ণ হারাম ও মারাত্নক কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের যাবতীয় বর্জণীয় কাজ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *